Tuesday, 26 February 2019

তার নাম



সেই মেয়েটির কাছে
আঁচলভরা আকাশ আছে
আর তাতে
একটা সন্ধ্যাতারা আছে l

আমি অনেক দূর থেকে দেখেছি
তাই অনেক যুগের ওপার হতে
অক্লান্ত পথে
চলেছি তারই অনুসরণে l
আমার জীর্ণ মলিন বেশ
আমার শীর্ণ দেহ, রুক্ষ কেশ
আমি নিঃস্ব হয়ে আজ এলাম তার দ্বারে l


আমার শ্রান্ত দেহ তার উষ্ণতায় মাখা
আমার ক্লান্ত মুখে তার মুখচ্ছায়ায়
সন্ধ্যাতারাটি পড়েছে ঢাকা
আমি বহুযুগের পথ চলার শেষে
সেই মেয়েটির নাম জেনেছি
ঊর্মিমালা সে l

Monday, 18 February 2019

মোনালিসা

তোমার আমার ভালোবাসা নিয়ে কবিতা লেখা যায়
জানো কি ?
শরীরে তোমার ছবি এঁকে 
আমি শত যোজন পথ পরিক্রমা করে 
তোমার শহরের উপকণ্ঠে পৌঁছই
দু দণ্ড সুখ দুখের গল্প হয়
সেই গল্প নিয়ে রঙ্গমঞ্চের চিত্রনাট্য লেখা যায়
জানো কি ?
তোমার শহরের রাজপথে হিরকপুষ্পের ইতস্তত আবরণ
পাশের গোলাপ বাগিচায় অজস্র ইরানি গোলাপ
আমি ঘাসের বিছানায় সম্মার্জনি বুলাই সন্তর্পনে 
তোমার পায়ে যেন না ফোটে নির্বোধ কণ্টক
তারপর বিছিয়ে নিই কাশ্মীরি গালিচা
পাশাপাশি বসে দু দণ্ড সুখ দুখের গল্প করি
ধ্রুপদী কিছু দুঃখের গল্প
আর 
সুখের কিছু গল্প যেন,  মন মোহনার তারান্নুম।
তোমার মুখের লালি পড়ন্ত সূর্যের আলোয় বড় মোহনিয়া লাগে
সেই দৃশ্য নিয়ে আরেকটা মোনালিসা আঁকা যায়
জানো কি ?

১৪ ফেব্রুয়ারি

জীবনপুরের পথের মোড়ে 
তোমার আমার দেখা
দেখা যখন হলো তখন 
হলাম পরানসখা।
সখা হলাম সঙ্গী হলাম 
সঙ্গে চলবো পথ
সুখ দুঃখের সাক্ষী হবো
ছাড়বো নাকো হাত।
অঙ্গীকারের মালাবদল
সিঁদুর ভালোবাসার
মিলন দুটি মনের হবে
বাসর হবে আশার।
সংসার হবে স্বপ্নে ঘেরা
মায়ায় গড়বো বাড়ি
তোমার আমার প্রেমের বসত
১৪ ফেব্রুয়ারি।

বৃষ্টিভেজা অঙ্গীকার

তোমার হাত ধরে আমি দাঁড়িয়েছি বৃষ্টিভেজা বিকেলে 
বৃষ্টিভেজা মাঠে শষ্য-তৃণের সম্মেলন 
বৃষ্টিভেজা অশ্বত্থ গাছের থেকে চুঁইয়ে পরে জল
আমার হাতে তোমার হাত - মাঝে বৃষ্টিবাষ্পের ব্যবধান 
একটি মাত্র ছাতার নিচে দুটি মাত্র প্রাণ 
সাদা বুনোটের বৃষ্টির জালে দিগন্তরেখা মুছে যায় 
ঘন কালো মেঘে লেপে যায় আকাশ 
বৃষ্টি এলো আরও ঝেঁপে
ছাতাটা গুটিয়ে ভিজবো এবার আমরা 
আমার হাতে তোমার হাত - দুজনের মনে এক অঙ্গীকার 
পাশাপাশি থাকবো পাশাপাশি ভিজবো 
পাশাপাশি চলবো যতদূর পথ আছে l 

মনের মানুষ হবো

তোমার ভেতর তুমি হবো মানা কোরো না,
তোমার রিদয়ের ধুকপুকি হবো
শুধুই অনুভব কোরো,
তোমার চোখের পলক হবো
সুখের অশ্রু দুখের শিশির
চুঁইয়ে পড়বে মন ছুঁইয়ে,
মন হবো মনের কোণের ভালোলাগা হবো
নিভৃতে রোমন্থন করা স্মৃতি হবো
যে স্মৃতি আনে তোমার ঠোঁটের কোণে অম্লান হাসি,
তোমার ঠোঁট হবো ঠোঁটের পড়শি টোল হবো
দুই গালে ফুটব হাসির তরঙ্গে,
তোমার হাঁটার ছন্দ হবো
পায়ের পাতার নুপুর হবো
বাজবো আমি রুনুঝুনু , 
তোমার অলস দুপুর হবো
তোমার রাতের স্বপ্ন হবো
সেই স্বপ্নে আমি রব
মানা করো না
তোমার ভেতর তুমি হবো
মানা কোরো না।
তোমার মনের মানুষ হবো
না না কোরো না।

মোনাল

তোমার চোখ থেকে চোখ ফেরাতে পারিনা বলে 
হাসলে তুমি মধুরেণ 
সত্যি পারিনা ফেরাতে আমি দৃষ্টি, 
দেখি নির্নিমেষে তোমার ও দুটি চোখের মায়াকাজল 
হয়তো কোনো স্বপ্নলোকে 
কিংবা স্বর্গলোকে সদ্য অবতীর্ণ হয়েছি 
কত পুণ্যের প্রসাদ কত কর্মের অর্জন 
কত শান্তি কত নিস্প্রপঞ্চ আয়োজন
আমি তোমার চোখে সূর্যোদয় দেখি 
তোমার চোখে দিগন্তরেখা 
আলেয়ার উত্তাপে দেখি 
হৃদয়ের পথ আঁকাবাঁকা 
ছেঁড়া পাল ভাঙা মাস্তুল টেনে
আমি পাড়ি দেই ভগ্ন জাহাজ নিয়ে
সপ্তদেশ খুঁজে রত্নরাজি আনবো 
প্রাণের বাজি রেখে  
মোনাল পাখির পালক আনবো 
মুকুটে দিও গুঁজে ।

মিষ্টিমেয়ে

তোমার চোখে চোখ পড়লে প্রতিবার তোমার প্রেমে পড়ি নতুন করে, 

ও মিষ্টিমেয়ে, তোমার পাশে দাঁড়ালে আমার নাকে আসে শ্বেত ফিরঙ্গিপানি ফুলের মিষ্টি সুবাস,

তোমার কাছে আসলে আমি তোমার মনের শব্দ পাই তোমার স্বপ্ন দেখতে পাই, 

জানি না কবে এতো আপন করলে, 

কিন্তু এত আপন করেছো যে এর পরে আর পর হয় না এর পরে আর আঁধার হয় না, 

তোমার হাসির স্ফটিক মাইলের পর মাইল পথ আলোর প্লাবন করে

তোমার খুশির এক্রিলিকে ভুবন জোড়া রঙের খেলা 

তোমার ছোঁয়ায় আমার দেহে প্রাণের শিহরণ 

হৃদয়ের প্রতিটি  বিন্দু রক্তের প্রতিটি কণিকা তোমায় চেনে, প্রতিটি হৃদকম্পনে তোমারি নামোচ্চারণ 

ও মিষ্টিমেয়ে, আমার শরীরে তোমার মনসবদারি আমার মস্তিষ্কে তোমার দখলদারি 

তোমার রেশম কোমল পায়ে আমি সর্বস্ব লুটিয়ে দিলাম ভালোবাসার গর্বে l 

পচা ছেলে

তুমি বললে সাগর হবো তুমি বললে ভূমি 
তুমি বললে সাগর বেলায় নুড়ি কুড়োই আমি 
তুমি বললে রংতুলি হবো তুমি বললে আকাশ 
তুমি বললে রামধনু হবো সাতটি রঙের প্রকাশ 
তুমি বললে সেতার হবো তুমি বললে ব্যাঞ্জো  
তুমি বললে কনসার্ট এ একাই কাঁপাই মঞ্চ 
তুমি বললে সকাল হবো তুমি বললে পাখি 
তুমি বললে সূর্য ওঠার আগেই উঠবো ডাকি 
তুমি বললে শীতকাল হবো তুমি বললে মেলা 
তুমি বললে ফুলমেলাতে হবো রঙের খেলা 
তুমি বললে শহর হবো তুমি বললে গাড়ি 
তুমি বললে রাস্তা জুড়ে ট্রামলাইন হতে পারি 
তুমি বললে সব পারি আমি না বললেও পারি 
তুমি ডাকলে 'পচা ছেলে' বলে ছুট্টে আসতে পারি l

তোমার জন্যই এ জনম আমার

তুমি ছাড়া এই আকাশে তারা নাই সূর্য্য নাই 
কেমন কালো অন্ধকার বলো 
তুমি ছাড়া এই বাতাসে নিঃশ্বাস নাই প্রশ্বাস নাই 
কেমন করে আছি বলো  
তুমি ছাড়া এই দেহে প্রাণ নাই ভালোবাসা নাই 
কেমন করে বাঁচি বলো 

তুমি ছাড়া একটা রাত্রি একশো প্রহর 
কোলাহল ভোলে ব্যস্ত শহর 
তোমার ছোঁয়ায় বেঁচে উঠি আমি 
তোমার ইশারায় ঘুমাই 

তোমার জন্যই এ জনম আমার  
তোমার জন্যই মাধুকরী 
তোমার জন্যই খড়কুটো এনে 
বসতবাটি গড়ি 
তোমার জন্যই বাঁচবো বলে 
রোজ শপথ করি l

তুমি আত্রেয়ী

এক একদিন মনে হয় 
তুমি আত্রেয়ী নদীর মতো 
অবিরল বয়ে চলেছো l
ঝকঝকে দুপুরে বা পড়ন্ত বিকেলবেলায় 
তোমার জলে সূর্য্য খেলা করে,
আমার মুখে বিম্বিত তোমারি বিভা ,
আমি বাঁধানো পাড়ে বসে 
সরসর করে বয়ে যাওয়া জলের শব্দ শুনি,
আর দেখি সৌখিন মাছশিকারীর বড়শিতে 
তিনকাঁটা রাইখর আর চাঁদামাছ ধরা,
অন্য পাড়ে নৌকা তে বালি তুলছে 
হয়তো বা বালিমাফিয়া হয়তো বা পারমিট পাওয়া ঠিকাদার l

বাঁধানো সিঁড়ি দিয়ে নামে গ্রামের বধূ 
বাসন মেজে চান করে নেবে নদীতে l
দামাল ছেলেগুলো পাশের বটগাছে ঝুড়ি বেয়ে ঝোলে 
আর পরম উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পরে জলে l
দূরের পাড়ের জংলী যজ্ঞডুমুর আর সরগাছের ফাঁকে 
ইদানিং দ্রুত অপসৃয়মান সূর্য্য জানান দেয় শীতের আগমন l
বর্ধিষ্ণু রাজবংশী পাড়ায় রিহার্সাল হবে সন্ধ্যায় 
এবারের 'খন' পালা - বোষ্টম বাউদিয়ার গান l

এতাবৎ চঞ্চলপ্রান দুইপাড়ের দৃশ্যপট গুটিয়ে,
পৃথিবীর সব আলো শুষে নিয়ে,
আত্রেয়ীর জল ঘনকৃষ্ণ হয় -
যেন জীবনের সব রং গচ্ছিত রেখে 
আমায় অভিভাবকীয় সুরে বলছে - কালকে আবার এস l

অনিবার্য রাতের সীমিত ব্যবধান, দলছুট কচুরিপানা, নির্বিষ জলঢোঁড়া
সব বহে যায় ইত্যবসরে l  

দাবি করি না

হাত ছেড়ে দেবে বলেছিলে 
ভুলে যাবে বলেছিলে অবলীলায় 
তাই বুঝেছি 
তুমি ছেড়ে যাওনি ভুলে যাওনি 
চোখের কোণে চিকচিক করা জলে আমারি নাম 
আর আমার বাড়ানো হাতে তুমি পড়ালে রুদ্রাক্ষের মালা l

ফেরাবে বলে ফিরিয়ে দাও না জানি 
এমনকি 
হারাবো বলে বহুকোষ পথ হেঁটেছি অভিমানে 
তবু ফিরে এসেছি 
ফিরে এসে দেখেছি 
মহানন্দার চরে কাঠামোর স্তুপ 
তুমি সূর্যাস্তের লালিমা মেখেছো গায়ে 
দেখেছি আমি 
মহানন্দার ঘাটে তুমি আমারি প্রতীক্ষায় l

তোমার পছন্দ নয় তবু বারবার চেয়েছি 
নিজের সত্তা কে রিক্ত করে 
ঈপ্সা উচ্চাশা বা প্রবৃত্তিকে লুপ্ত করে 
প্রতিভা বাসনা বা সম্ভাবনাকে মিথ্যা করে    
লুটিয়ে পড়ি তোমার দুই রাঙা পায়ে 
ভোরের ফোটা স্বেতপুষ্প হয়ে 
স্বীকার্য হোক, দাবি করি না 
না হলেও জানি কত অমূল্য তুমি  l

আত্রেয়ীর কিনারে

তোমার কথা ভাবলে পরে 
আত্রেয়ীর বুকে ছোট্ট একটা তরঙ্গ তুলে 
একঝাঁক রাইখর মাছ 
রুপোর ঝলকে আপনমনে খেলে l
দলছুট এক পরিযায়ী পাখি 
নদীর চর খুঁটে  আনমনে শামুক তোলে l
আর খেয়ামাঝি ছইয়ে বসে 
অলস বিকেলে ভাটিয়ালি সুর তোলে l
তোমার কথা ভাবলে 
আত্রেয়ীর পারে কাশবন মৃদুমন্দ দোলে ,
আর চড়ার বালিতে ফুটি ঝিঙে তরমুজ চাষ করে 
কৃষক লাভের স্বপ্ন বোনে l

এই সেই আত্রেয়ী 
তোমার কথা ভেবে যার কিনারে 
এসে বসি আমি রোজ ,
তার তরঙ্গে আছে লেখা তোমার নাম
তার কাছেই পাই আমি তোমার খোঁজ l

তোমার ভালোবাসা

এতটাই ভালোবাসতে জানো তুমি
সবুজ শস্যতরঙ্গের মাঠও ডাকছে তোমায় 
সদ্য ওঠা রামধনু উঁকি ঝুঁকি মেরে তোমার খোঁজ নিচ্ছে -
অল্প সময় হাতে তবু তোমার দেখা চাই তার,
পরিযায়ী পাখিগুলোরও সুদূর উত্তরে ফেরার কথা নেই আর - 
তোমার ভালোবাসা এভাবেই আবিষ্ট করেছে চরাচর l 
এতটা ভালোবাসা দিয়েছো তুমি -
তিনধারিয়ার পথে যতগুলি ঝর্ণা পড়েছে 
দেখেছি তারা লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন তোমার নাম নিয়ে l
আরও উঠতে উঠতে যখন আমরা মেঘের কাছাকাছি 
স্পষ্ট দেখলাম স্নিগ্ধ মেঘের দেয়ালে 
বিম্বিত তোমারি প্রতিচ্ছবি 
তুমি হাসলে 
তোমার মুখে ঝরে পড়লো স্নেহকণার মতো বৃষ্টি 
পদ্মপাতায় শিশিরকণার মতো টলটল করছে বৃষ্টিকণা
পদ্মফুলের মতো সুন্দর তোমার মুখে l

তুমি ভালোবেসেছো তাই


সে দোষ স্বপ্নের নয় 
মনের ও নয় 
বল্গাহীন তো তারা জন্মাবধি 
তবু এ আবেশ 
এই ভালোলাগা 
জীবনে প্রথম 
কারণ, তুমি আগে আসোনি তাই I
আমার এ বসন্তে ফাগুন এলো 
হাওয়ায় ফাগ এর গন্ধ এলো 
এ বার প্রথম 
কারণ, তুমি এসেছো তাই I
স্বপ্ন আজ নীল আকাশ 
মন আজ হালকা মেঘ 
আবহে মধুৎসবের সংগীত 
কেন প্রথম বলতো 
কারণ, তুমি ভালোবেসেছো তাই I

ঝিলমিল


ঝিলমিল স্বপ্নেরা ঝিলমিল
ওই বুঝি হাসলো কে খিলখিল
ঘুমের গহীনে দেখলাম তোমাকেই
শান্ত পুকুরের জলে 
টুপ কোরে পরে ঢিল।
পাগলের মতো খুঁজে ফিরি এ শহরে
মধ্যরাত্রে কিংবা দ্বিতীয় প্রহরে
পেলাম তোমারই হাসি
আর
তোমার হাসিতে পেলাম কবিতার অন্ত্যমিল
স্বপ্নের কোলে হাসে স্বপ্নেরা ঝিলমিল।

শীতের সকাল ফোটে শহরের রাস্তায়
আবেগের চাদর বিকোয় সেথা বড় সস্তায়
বড় সস্তায়
হিসেবের অংকে অনেক জল অনেক গরমিল
জীবনের অংকে অনেক জল অনেক জটিল
আমি ছেঁড়া ঝুলি নিয়ে কবিতা কুড়োই
ডানায় ভর দিয়ে শহরটা মাপে এক শঙ্খচিল
আর এক গাংচিল।
আমি
খুঁজে ফিরি না পাওয়ার পাঁচিল
চেনা অচেনা রাস্তা সে বড় পিচ্ছিল
খুঁজে ফিরি তোমারই হাসিমুখ
চেনা অচেনা মুখের 
বয়ে চলে মিছিল
খুঁজি সেই হাসি অমলিন অনাবিল
সে হাসি সুমধুর স্বপ্নিল
ঝিলমিল সেই হাসি ঝিলমিল।

তুমি আসবে তো?


মনের আখরে
সবুজ পাথরে
নাম টি তোমার লিখে
জমিয়েছি নীলচে ঝর্ণার পাশে
তুমি দেখবে বলে,
সেথা রামধনু রঙ্গা সিঁড়ি নামবে
তুমি আসবে বলে
ঘাসের গালিচায় সোহাগের চাদর বিছিয়েছি
তুমি বোসবে বলে
রচনা করেছি স্বপ্নের মায়াভূবন
তুমি ভালোবাসবে বলে
আমায় ভালোবাসবে বলে।
সেথা সূর্য্য গলিয়ে
আসমান চুঁইয়ে পরে রৌদ্রকণা
সুবর্ণ কাননে সেথা
হীরক পুষ্প ফোটে।
তোমায় বরণ করবো বলে
সপ্তডিঙ্গায় রেখেছি আরো শত আয়োজন।
ভোরের ঘাসের শিশির নিংড়ে
তাম্রপত্রে জমিয়েছি শুভ্র জল
তোমার দুটি পা ধুয়ে দিয়ে
মুছাবো মিশরীয় পট্টবস্ত্রে।
ও রূপকাহিনীর রাজকন্যা
তোমার পায়ের কাছে বসে
শুনবো তোমার সুরেলা সঙ্গীত
তাই দুই দন্ডের জন্য
স্তব্ধ অলিগুঞ্জন বিহঙ্গকাকলি।
তুমি আসবে তো?

নদী হয়ে বয়ে চলেছি


মন বাউল মন তোর পথ চেয়ে
মন উদাসী মন তোর মন চেয়ে
হু হু করা বিরহী বাতাসে
স্নিগ্ধ বৃষ্টিধারা হয়ে ঝরে পড়ে।
বয়ে চলে নদীর গহনা হয়ে
কানে ঝুমঝুমি দুল আর 
হাতের রিনিঝিনি চুড়ি বাজিয়ে,
কলমুখর গ্রাম হয়ে
পাখির শিস দেয়া ঘন বন হয়ে
কখনো বা রেলব্রিজের ছায়া গায়ে মেখে;
না ধরে রেখে কোনো ছেঁড়াপাতা ফুলমালা
ভাসানের কাঠামো বা ম্লান আবিলতা।

পুঞ্জ পুঞ্জ মনোহর জলধর মেঘের 
মনোরম ছায়ায়
উদাসীন এক বকুলতলায়
তুমি বসে আছো বড় অভিমানী হয়ে

মন আমার ঝরতে ঝরতে নদী হয়ে
তোমার পায়ে আলতো চুমে
বয়ে চলেছে,
বয়ে চলেছে
তোমার মুখছবি বুকে এঁকে নিয়ে।

শুধু আমারই তুমি


তোমার হলদে রঙা শাড়ী
তোমার নীল সাদা রং বাড়ি
তুমি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালে
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়ি।

তুমি বসন্তের ঝিরি হাওয়া
তুমি সব ফুলে দাও গন্ধ
তুমি সকালবেলার প্রথম আলো
তুমি নিষ্পাপ মন, নির্দ্বন্দ্ব।

তুমি চিত্রকলার সব রঙ
তুমি কবিতার বুকে ছন্দ
তুমি পাহাড় থেকে সমতলে নামা
ঝরনা মৃদু ও মন্দ।

তুমি সবুজ মাঠের হলুদ ফসল
কৃষকের মুখে হাসি
তুমি সূর্য্যের আলো রোদ ঝলমলে
জোছনার বানভাসি।

তুমি চরাচর ব্যেপে জাগ্রত সদা
দখল করেছো (আমার) মনভূমি
যেদিকে তাকাই সেদিকেই পাই
একবার বলো শুধু আমারই তুমি।

তুমি এলে না


মেঘেরো সামিয়ানা সীমানা জুড়ে
আলো কেনো মেলে না
বুঝি তুমি এলে না
আজ তুমি এলে না।

পরিযায়ী হাওয়া আসে
ঝরাপাতা, বনোফুলে
বিজুরিও ঝরে পড়ে থমোকে থমোকে 
বালকেরা মাঠে আজ খেলে না
পথ চেয়ে পথ দেখি
বুঝি তুমি এলে না।

মনেরো মুকুরে ব্যাথা খেলে
তোমারো মুখছবি খেলে, দেখা মেলে না
আমেরো মুকুল ঝরে
ধুলোঝড় এলো উড়ে
ঝুঁটিয়াল চটকেরা পাখা আর মেলে না
বুঝি তুমি এলে না।

জানালার ঝিল্লি কে
ভেদ করে আলো বুঝি ঘরে আর খেলে না
আলো ছায়া খেলা কোরে
তোমারো গালে বুঝি
হৃদয়ের চিহ্নটি আঁকে না
রোজকার মতো আজ আঁকে না
তাই বুঝি এলে না।

শুধু তোমার আমি হলাম


নিজেকে ভুলে নিজেকে পেলাম
নিজেকে হারিয়ে নিজেকে পেলাম
তোমাকে পেলাম
শুধু আমার করে পেলাম।

অকারণে চুম্বন এঁকে
তোমার দুটো চোখ
আমার করে নিলাম
আমার বুকে তোমার মুখ
কয়েদ করে নিলাম
শুধু আমার করে নিলাম।

ঘুমের কোলে মাথা দিয়ে
এক আকাশের একশো তারা
আপন করে নিলাম
তোমার চোখের সপন গুলো
আপন করে নিলাম
শুধু আমার করে নিলাম।

এক নিঃশ্বাস এক প্রঃশ্বাস
এক ভরসা এক বিশ্বাস
একশো শপথ তোমার সঙ্গে
আপন করে নিলাম-
আমার প্রাণের শেষ বিন্দু
তোমার প্রেমে উজাড় করে
নিপাট নিঃস্ব হলাম
তোমায় কাছে পেলাম 
তোমার আমি হলাম
শুধু তোমার আমি হলাম।

দুর্বার প্রেম

তোমার দারুচিনিগন্ধ ওষ্ঠে
ওষ্ঠ ডুবিয়ে
কষ্টের সাথে কষ্ট মিলিয়ে
স্বেদকনার নদী সৃষ্টি করেছি
মদির সোহাগে বালিয়াড়ি ধ্বংস করে
এগিয়ে চলেছে নদী।
জলের ছন্দে ভাসে
অঙ্গীকারের সংগীত
দুপারের সবুজ প্রতিশ্রুতি
আর
চিতার আগুন নিভিয়ে দেবার 
শীতল স্পর্ধা।

প্রতীক্ষা ২


কমলা গেরুয়া রোদ
উঠোনে খেলে আবার ছায়ায় ফিরে যায়
আজ এক শতাব্দী আমি তোমার প্রতীক্ষায়
উন্মন আবেশে উদ্ভ্রান্ত দিন কাটে
অবিশ্রান্ত বৃষ্টি অবসন্ন হয়ে
দৃষ্টি শুন্য নেত্রপাতে 
আমার বিষন্নতার সাথী হয়
আর মরুময় তিয়াসার মাঠ
সিঞ্চিত করে উর্বর করে তোলে
রোমাঞ্চিত মৃত্তিকা শিহরিত হয়-
নব সবুজের আস্ফালনে
অরণ্য তরঙ্গশীর্ষ আন্দোলিত হয়
ঘনতর শ্যমলীমার স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে

অপেক্ষার মরুদ্দ্যানে তোমারই প্রতীক্ষায়
কমলা গেরুয়া রোদ
উঠোনে খেলা করে।

প্রতীক্ষা


জানি না কতদিন দেখিনি তোমাকে
জানি না আরও কতদিন তোমায় দেখবোনা
কিন্তু প্রতীক্ষার প্রতিশ্রুতি মৃত নয়
        যেমন মৃত নয়
ঢেউ খেলানো সবুজ গালিচার অঙ্গীকার - 
সুপ্ত থাকে শস্য বীজ সমূহের অন্দরে
        যেমন মৃত নয়
দীপ্ত উদিত সূর্য্যের উজ্জ্বল প্রকাশ -
ক্ষনিকের চরাচর ব্যাপী ঘন কুয়াসাময় আবরণে
    তবু অপেক্ষার তারা গুনে 
আঙুলগুলি ক্লান্ত অবসন্ন
    যে দু হাত তোমার অনুপম সৌন্দর্য্য
ধারণ করতো সন্তর্পনে
তারা আজ রিক্ত শুন্য
    আর ক্যানভাস জুড়ে
যারই ছবি আঁকি
ফুটে ওঠে তোমার চির চেনা চক্ষুদ্বয়

কেন এত অসহায় আমি
তুমিও কি তাই
 তুমিও কি জানো না আরও কতদিন তোমাকে দেখবো না